সততার পুরস্কার গল্পের তৃতীয় ব্যক্তির মানসিকতার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ?
উত্তর: সততার পুরস্কার গল্পের তৃতীয় ব্যক্তি ছিল সততা ও নৈতিক মূল্যবোধের ধারক। সে কৃতজ্ঞতাবোধের সমুজ্জ্বল। সম্পদশালী হয়েও সে তার অতীতকে ভুলে যায়নি।
সততা বলতে কি বুঝায় ?
যে সব গুণে মানবজীবন সুন্দর ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠে সে গুলোর মধ্যে সততার স্থান সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সততা মূলত: কোন একটি গুণকে বুঝায় না। অনেকগুলো গুণের সমাহার। যেমন সত্যনিষ্ঠা, আন্তরিকতা, স্পষ্টবাদিতা এদের যে কোন একটি বা একত্রে সব কটিই সততার ভেতর পড়ে। সরলতা, নিরীহতাকেও সততা বলে। সততা বলতে সত্যের অনুসারী মানুষের সৎ থাকার প্রবণতা বোঝায়। অন্যায়-অনাচার থেকে নিজেকে সাবধানে দূরে রেখে, অবৈধ কাজকর্ম থেকে নিজেকে সাবধানে সরিয়ে রেখে যে জীবন পরিচালিত হয়, তা-ই সৎ জীবন সেখানেই প্রকাশ পায় সততার নিদর্শন।
কোন প্রকার কাজের কাজ থেকে দূরে থেকে ন্যায় ও সত্যের প্রতিফলন ঘটিয়ে চরিত্রের বিকাশ ঘটাতে পারলে তাকেই সত্যবাদী বা সততার বৈশিষ্ট্যময় জীবন বলা চলে। সততা মানুষের জীবনে একটি মহৎ গুণ। বিবেকবান মানুষের পরিচয় মেলে সৎ ও আদর্শ জীবন যাপনের মাধ্যমে।
সব দেশে সবকালে বলা হয়েছে সততাই শ্রেষ্ঠ পন্থা। মিথ্যা কখনো কখনো সাময়িকভাবে জয়ী হয় এটা ঠিক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় অনিবার্য। এটা সত্য যে, সংসারে সত্যের চেয়ে মিথ্যার আকর্ষণ বেশী। সততাকে বাজারে বা হাটে বিক্রি করা যায় না বা একে ব্যাংকের চেকের মত ভাঙ্গিয়েও খাওয়া যায় না। বরঞ্চ সংসারে দেখা যায়, সত্যবাদীর চেয়ে মিথ্যাবাদীর উন্নতি হয় তাড়াতাড়ি। বস্তুত সৎ মানুষের টানা-পোড়ন বেশী। অসৎ পথে ধনী হওয়ার সুযোগ বেশী। সৎ লোকের লাভ নৈতিকতা। সততা সেই শক্তি যার গুণে মানুষ মানুষ হয়, যা না থাকলে মানুষের সাথে পশুর তফাৎ পাওয়া যেত না। কিন্তু মানুষ অসৎ হওয়ার জন্য বহুলাংশে দায়ী সমাজ। যে সমাজে সততার প্রশংসা নেই অথবা অন্যায়ের প্রতি ঘৃণা নেই সে সমাজে সহজেই সততার অভাব ঘটে। যেখানে মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে সেখান থেকে সততা বিদায় নেয়।
নৈতিক অবক্ষয়, বিবেকহীনতা, মিথ্যাচার থেকেই সততাহীনতার সূত্রপাত হয়।
মনুষ্যত্ববোধ লুপ্ত হলেই সমাজে দেখা যায় বিশৃঙ্খলা। বাহ্যিক জীবনের লোভ, মোহই মানুষকে মিথ্যার দিকে টেনে নিয়ে যায়। কিন্তু মিথ্যা সাময়িকভাবে জয়ী হলেও তার শেষ রক্ষা হয় না। অপরাধী বেশিদিন নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারে না। জনতার আদালত, সন্তানের আদালত তাকে শাস্তি দেয়ই দেয়। অপরাধী ধরা না পড়লেও ধরা পড়বার ভয়ে সে মানসিক অস্বস্তিতে থাকে। সততার অভাবে জীবনে ও সমাজে ধ্বংস আসুক এটা কারো কাম্য নয়। এমন কি যে অন্যায় করে তারও সত্যের প্রতি থাকে শ্রদ্ধাবোধ।
সততাহীন সমাজ মানুষের কাজের অনুপযোগী হয়ে উঠে। সত্যহীনতায় আছে অগৌরব। দুর্নীতি মুক্ত, সত্যবাদী জীবনই ধর্মীয় আদর্শের জীবন। পৃথিবীর সব ধর্মেরই মূল কথা হচ্ছে ‘সদা সত্য কথা বল, সৎপথে চল।’ তাই ধর্মবোধ ও আদর্শই পারে জীবনকে সৎপথে চালিত করতে। জীবনে সততার চর্চা, জীবনকে মহৎ করে। সুন্দর ও পুণ্যবান জীবনের জন্য সততার অনুশীলন অত্যাবশ্যক। সততাকে অবশ্যই উচ্চ মূল্য দিতে হবে এবং তা হতে হবে কাজে। জন্ম সূত্রে কেউ অসৎ হয়না। অসৎ হয় পারিবারিক চাপে, সার্বিক হতাশায়।
পারিপার্শ্বিক অবস্থা সৎ থাকবার অনুকূলে হতে হবে। সত্যে মুক্তি, মিথ্যায় ধ্বংস-এই বিশ্বাসের ভিত হতে হবে দৃঢ়। অসত্যের পরাজয় এবং সত্য-ন্যায়ের পথ সমুজ্জ্বল এই বিশ্বাস মনে রেখে সততার অনুশীলন করতে হবে এবং জীবনে তার প্রতিফলন ঘটিয়ে যথার্থ মনুষ্যত্বের অধিকারী হতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সততার শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে।
ব্যক্তি জীবনে তেমনি সমাজ জীবনে সততার চেয়ে মহৎ গুণ কম আছে। জীবনের সার্থকতার জন্য সততা অত্যাবশ্যক। সেজন্য ছোট বেলা থেকেই সততা, সত্যবাদিতার অনুশীলন দরকার। পারিবারিক পরিবেশ হতে হবে সত্যবাদী এবং সততার অনুকূলে।
অভিভাবকদের সচেতনতা শিশুদের সত্যবাদী ও সৎ হতে শিক্ষা দেবে। সততাই পারে সুন্দর ও সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থার বিকাশ ঘটাতে। সুস্থ সামাজিক জীবনের জন্য সততাই হচ্ছে অপরিহার্য শর্ত।